মির্জা আব্বাসের বার্তায় আপ্লুত অসুস্থ খোকা

রাজনীতিতে ‘খোকা-আব্বাসের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব’ পুরানো। ঢাকা মহানগরীতে নিজের রাজনৈতিক আধিপত্য ধরে রাখতে একজন আরেকজনকে ছাপিয়ে গেছেন অনেক সময়। দুইজনই অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। পাশাপাশি দলের রাজনীতিতেও প্রভাবশালী তারা। কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা নিয়েও তাদের মধ্যে থাকতো প্রতিযোগিতা।
তবে এবার প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব ভুলে দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার গুরুতর অসুস্থতার খবর জেনে মর্মাহত হয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। খোকার অসুস্থতা নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসও দেন। নিয়মিতই খোকার শারীরিক অবস্থার খবর রাখছেন তিনি। আব্বাসের বার্তা পড়ে খোকাও আপ্লুত হয়েছেন। হলেন অশ্রুসিক্ত!   
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়েন ক্যাটারিং ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালে ১৪ মে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাদেক হোসেন খোকা। গত সোমবার তার শারীরিক অবস্থান অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। শুক্রবার সকাল থেকে তাকে অক্সিজেনের মাত্র আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অক্সিজেন দিয়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে।
খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন নিউইয়র্কে তার বাবার পাশেই থাকেন। এছাড়াও হাসপাতালে সার্বক্ষণিক রয়েছেন তার মা, এক ভাই ও বোন। পরিবারের সদস্যদের বাইরেও নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংবাদিক মনির হায়দার, ড. তুহিন মালিক, বিএনপির সহ স্থাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই খোকাকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন।
শুক্রবার সকালে ড. রফিকুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘গত পরশু আমি সাদেক হোসেন খোকাকে হাসপাতালে দেখা এলাম। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। শ্বাসকষ্ট আছে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি কথা বলতে পারছেন। তাকে নিয়ে মির্জা আব্বাসের স্ট্যাটাস দেখালে তিনি অনেক আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।’
তিনি জানান, দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সহকর্মীর বার্তা পেয়ে তিনি (খোকা) অনেক খুশি হয়েছেন।
সাদেক হোসেন খোকার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম বলেন, আজকে সকালে আমার ইশরাকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, অক্সিজেনের মাত্রাটা একটু বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এইটুকুই। 
খোকাকে নিয়ে মির্জা আব্বাসের সেই স্ট্যাটাস হুবুহু এখানে তুলে ধরা হলো-প্রিয় খোকা,এই মাত্র আমি জানতে পারলাম যে তোমার শরীর খুব খারাপ। তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জানার পর থেকে আমার মানসিক অবস্থা যে কতটা খারাপ এই কথাটুকু কারো সঙ্গে শেয়ার করবো সেই মানুষটা পর্যন্ত আমার নেই। তুমি আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি অনেক স্মৃতি আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ভাসছে। তোমার আর আমার দীর্ঘ এই পথচলায় কেউ কেউ তাদের ব্যক্তি স্বার্থে তোমার আর আমার মাঝে একটা দূরত্ব তৈরি করে রেখেছিল, তবে তুমি আর আমি কেউই সেই দূরত্ব রয়েছে বলে কখনোই মনে করিনি।
আমি জানি না, তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে কিনা। আমার এই লেখাটি তোমার চোখে পড়বে কিনা বা তুমি দেখবে কিনা তাও আমি জানি না, তবে বিশ্বাস করো তোমার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানবার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেন যেন ভেঙে আসছে। আমি বার বার অশ্রুসিক্ত হচ্ছি। মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দুহাত তুলে তোমার জন্য এই বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করছি, তিনি অবশ্যই তোমাকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন।
তুমি আর আমি কাধে কাধ মিলিয়ে, বুকে বুক মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করে যাব। না হয় সেই আগের মতোই স্বার্থপর কোনো মানুষদের জন্য আব্বাস আর খোকা বাইরে বাইরে দূরত্বের সেই অভিনয়টা করে যাবো, আর ভেতরে থাকবে দুজনের প্রতি দুজনের অন্তর নিঙরানো ভালবাসা।আল্লাহ্ তোমার সুস্থতা দান করুক।তুমি ফিরে এসো খোকা, তুমি ফিরে এসো।আমি অপেক্ষায় থাকবো।

Comments

Popular posts from this blog

নিউইয়র্কে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু